News Desk : কথায় আছে হাল ছেড়ো না বন্ধু। সত্যি জীবনে কিছু বিষয়ে হাল না ছেড়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয়।ইউপিএসসি (UPSC) হলো দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি। হাজার হাজার চাকরি প্রার্থী চোখে স্বপ্ন নিয়ে এই ইউপিএসসি পরীক্ষা দেন। যদিও এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সহজ বিষয় নয়। অনেকেরই কালঘাম ছোটে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। তবে, অনেক শিক্ষার্থী তাদের কঠোর পরিশ্রম,মনের জেদ,একাগ্রতা ও সঠিক কৌশল অবলম্বন করে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কোনো পরিস্থিতিতেই হাল না ছেড়ে এগিয়ে চলাই তাদের মূল মন্ত্র। আর এই সকল মানুষের সাফল্যের কাহিনী (Success Story) আগামী দিনের পরীক্ষার্থীদের খুব অনুপ্রাণিত করে। আজ আমরা এই প্রতিবেদনে এমনই একজনের সম্পর্কে বলতে চলেছি। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত। Success Story
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে কার্তিকের লক্ষ পূরণ
আমরা কথা বলছি বিজ্ঞানী কার্তিক কনসালের (Kartik Kansal) সম্পর্কে, যিনি হুইলচেয়ারে বসেই তার ইউপিএসসি পরীক্ষার স্বপ্নজয়ের দৃষ্টান্ত রেখেছেন। ছেলেবেলা থেকেই কঠিন শারীরিক ব্যাধির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। যখন তার বয়স মাত্র আট বছর, তখন তিনি মাসকুলার ডিস্ট্রোফিতে আক্রান্ত হন। তার চোখের সামনে স্বপ্নগুলো ঝাপসা হতে শুরু করে। সেদিন থেকে কার্তিকের মা তার পাশে থেকে তাকে মনের জোর জুগিয়ে গেছেন। অল্প বয়সে সকলে যখন বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলা করত, ঠিক সেই সময় কার্তিকের সময় কাটত থেরাপি ও যোগব্যায়ামে, কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা তার ইচ্ছাশক্তির পথে কখনই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ঠিক যেই মুহুর্তে শারীরিক দুর্বলতা আর ক্লান্তিতে তিনি ঝুঁকে পড়তেন, তখনই তাকে শক্তি জোগাতো তার লক্ষ্য।
আরো পড়ুন:- সৌন্দর্যে কোনো অভিনেত্রীর চেয়ে কম নন এই আইপিএস অফিসার! বলিউড সিনেমাতেও করেছেন কাজ! জানুন বিস্তারিত
কার্তিকের শিক্ষা
তিনি আগাগোড়াই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে আইআইটি স্নাতক পাশ করেন। তিনি ইউপিএসসির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস পরীক্ষা-সহ একাধিক পরীক্ষায় পাশ করেন। যদিও তার শারীরিক অক্ষমতার কারণে তিনি প্লেসমেন্ট পাননি, যার দরুন তিনি একসময় কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন, কিন্তু হাল ছাড়েননি। প্রশাসনিক পদে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন তাকে আবারও উদ্যম যোগায় মনে। এক সর্বভারতীয় চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস পরীক্ষার প্রিলিতে ভাল ফল করেছিলাম কিন্তু যখন মেইন পরীক্ষার লিস্ট আসে, তখন আমি জানতে পারি যে আমার অবস্থার কারণে আমি কোনও পদের জন্য যোগ্য নই। এটা আমার জন্য একটি কঠিন সময় ছিল। মানসিকভাবে, আমি প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমি আমার শরীরের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করব? চোখের সামনে সব স্বপ্ন কেমন যেন হারিয়ে যেতে লাগল”। Success Story
ইসরোতে কাজ করার পাশাপাশি ইউপিএসসি প্রস্তুতি
কার্তিক এরপর ২০১৯ সালে ইউপিএসসিতে ৮১৩ র্যঙ্ক করেন, কিন্তু কার্তিক চেয়েছিলেন একটি প্রশাসনিক পদ। তার জন্য পরের বার আবার জীবনের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় বসতে হয়। চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রিলিতে দারুণ র্যঙ্ক আসে তার, কিন্তু মেন পরীক্ষায় ফের ভরাডুবি হয় তার। তবে, তার এই ব্যর্থতা তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে আরো অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনে (ISRO) চাকরির পাশাপাশি দেশের প্রশাসনিক পদে চাকরির জন্য প্রস্তুতি চালাতে থাকেন। নিজের কাজের পাশাপাশি কার্তিক পড়াশোনা চালাতে থাকেন। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে,“যেহেতু আমি কাজের দিনে নয় ঘণ্টা কাজ করতাম, তাই আমি সেই অনুযায়ী পড়াশোনা করতাম। সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে, আমি সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠতাম, সকাল ৮ টা পর্যন্ত পড়াশুনা করতাম এবং তারপরে প্রস্তুত হয়ে অফিসের জন্য রওনা দিতাম। অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা, আমি রাত ১১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম”।
২৭১ র্যাঙ্ক করে করলেন অসাধ্য সাধন
এরপর কার্তিক ২০২১ সালের ইউপিএসসি পরীক্ষায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে ২৭১ র্যাঙ্ক করে সকলকে চমকে দেন। হুইল চেয়ারে বসেই তিনি তার স্বপ্ন পূরন করে অসাধ্য সাধন করেছেন। তিনি বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনে কর্মরত। বিজ্ঞানী কার্তিক কনসালের সাফল্য (Success Story) বর্তমানে বহু যুবক যুবতীর বিশেষ করে বহু শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষের আদর্শ। Success Story