News Desk : প্রত্যেকটি মধ্যবিত্ত বাঙালির ভ্রমণ তালিকায় প্রথমেই থাকে দিঘা, পুরী এবং দার্জিলিং। দিনে দিনে এই জায়গায় মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। দু-চার দিনের ছুটি কাটানোর জন্য মানুষ টুক করে বেরিয়ে পড়ে এই তিনটি জায়গার মধ্যে কোনো একটিতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। অনেকেই বেশি ভিড় জায়গা তেমন পছন্দ করেন না, তখন তারা পাড়ি দেন বিদেশে নির্জন কোনো দ্বীপ বা সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে, তবে বিদেশযাত্রার খরচের দিক দেখলে গেলে তা অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। তবে চিন্তার কারণ নেই, আমাদের দেশেই আছে এমন কিছু অসাধারণ সমুদ্র সৈকত রয়েছে, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। আজ আমরা আপনাদের এমনই কিছু সমদ্র সৈকতের সম্পর্কে বলতে চলেছি। আসুন জেনে নেওয়া যাক।
গুজরাটের শিবরাজপুর দ্বীপ :
শিবরাজপুর সৈকত দেবভূমি দ্বারকার কাছে অবস্থিত। এই দ্বীপটি এতদিন আড়ালে ছিল, তবে এবার পর্যটনের জন্য এই দ্বীপটিকে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। গুজরাট সরকার এই দ্বীপের উন্নয়নের জন্য বিশেষ নজর দিচ্ছেন। গোয়া বিচের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় এই সমুদ্র সৈকত। এখানে স্কুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং, বোটিং-এর সুবিধা রয়েছে, এছাড়াও এখানকার দ্বারকাধীশ মন্দির, বেট দ্বারকা, নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ ও রুক্মিনী দেবীর মন্দির হলো বেশ আকর্ষণীয় স্থান।
দিউ দ্বীপ :
এই দ্বীপটি আরব সাগরের তীরে অবস্থিত। এখানে এক সময়ে পর্তুগিজদের রাজত্ব ছিল। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে। এখানে ভ্রমণের সেরা সময় হলো অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস। এখানকার আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে দিউ দুর্গ, গঙ্গেশ্বর মন্দির, ঝিনুকের সংগ্রহশালা প্রভৃতি।
ওড়িশার গোল্ডেন বিচ :
এই সমুদ্র সৈকতটি অসাধারণ। বিগত তিন বছর ধরে এই সৈকত ব্লু ফ্ল্যাগ সৈকতের মর্যাদা বজায় রেখেছে। এই সৈকতে পর্যটকদের তেমন আনাগোনা না থাকায় ভিড় কম হয়, তাই আপনি এখানে নিরিবিলিতে কিছুটা সময় কাটাতেই পারেন। এখানে যতদূর চোখ যায় শুধুই হলুদ বালির চর, যার উপরে রাখা দু-এক খানা রোদ পোহানোর ডেক চেয়ার। আবার সঙ্গে বাহারি ছাতা। একেবারে ঝকে ঝকে পরিচ্ছন্ন সৈকতটি দেখলে অনেকেই বিদেশি সৈকত ভেবে ভুল করতে পারেন।
কর্নাটকের কাসারকোড সৈকত :
এই সমুদ্র সৈকতটি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, শান্ত এবং নিরিবিলি। পেয়েছে ব্লু ফ্ল্যাগ সৈকতের মর্যাদা। এখানকার মনোরম পরিবেশের মাঝে আপনার সময় কাটাতে ভালই লাগবে।
অন্ধ্রপ্রদেশের রুশিকোন্ডা সমুদ্র সৈকত :
এই সমুদ্র সৈকতটি বিশাখাপত্তন থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে পূর্বঘাট পর্বতমালার ঢালে অবস্থিত। এখানকার দিগন্ত বিস্তৃত সোনালি বালিরাশি, স্বচ্ছ নীল জল আপনাকে মুগ্ধ করবে। রুশিকোন্ডা সৈকত পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণের। এখানে গেলে রামকৃষ্ণ বিচ এবং ভীমা বিচ যেতে ভুলবেন না। রামকৃষ্ণ বিচের পাশেই রাখা সাবমেরিন আইএনএস কুরোসওয়া টিকিট কেটে দেখে নিতে পারেন। রামকৃষ্ণ বিচের পাশে রয়েছে মৎসদর্শিনী। সমুদ্রের তলদেশে থাকা নাম না জানা নানা রকম মাছেদের মিউজিয়াম। এছাড়াও এখান থেকে রোপওয়ে করে যেতে পারেন পাহাড়ের উপর অবস্থিত কৈলাসগিরি মন্দিরে, যেখান থেকে আপনি দেখতে পাবেন অর্ধচন্দ্রাকৃতি সমুদ্রের সৌন্দর্য।
কেরলের কাপ্পাড বিচ :
কেরলের কাপ্পাড সৈকতের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুন ভালো হওয়ায় অনেকেই এই সৈকতকে দেশের সবচেয়ে নিরাপদ সৈকত বলেন। এই সৈকতটিও ব্লু ফ্ল্যাগ সৈকতের মর্যাদা পেয়েছে।
ইডেন বিচ :
পন্ডিচেরিতে অবস্থিত ইডেন বিচ। ৮০০ মিটার বিস্তৃত এই দ্বীপটি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং এখানে রয়েছে ওয়েস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। সৌন্দর্যের দিক থেকে এই সৈকতটি রয়েছে শীর্ষ স্থানে। এটিও ২০২১ সালে ব্লু ফ্ল্যাগ মর্যাদা পেয়েছে।
তামিলনাড়ুর কোভালাম সৈকত :
তামিলনাড়ুর কোভালাম সৈকতটি তামিলনাড়ু চেন্নাই থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে এই সৈকতটি অবস্থিত।এটি কোভেলং সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত। কোভালাম হলো আরব সাগরের তীরে কেরলের একটি ছোট সৈকত শহর৷ কোভালাম কথার অর্থ নারকেল গাছের বন৷ এই সমুদ্র সৈকতে নারকোল গাছে ভরে রয়েছে৷ এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এখানে কটাদিন সময় কাটাতে। এক সময় এখানে মত্স্যজীবীরাই বসবাস করতেন৷ ১৯৩২ সালে ত্রিবাঙ্কোরের মহারানি সেথু লক্ষ্মীবাঈ এখানে নিজস্ব একটি রিসর্ট তৈরি করার পর এটি সবার নজরে আসে এবং তারপর সত্তরের দশক থেকে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে এই সমুদ্র সৈকতে৷ ক্রমশ এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আন্দামানের রাধানগর সৈকত :
বিশ্বের সবচেয়ে মনোরম সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে আন্দামানের রাধানগর সমুদ্রসৈকত অন্যতম। এখানে বেড়াতে যাওয়ার সেরা সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস।পর্যটকেরা এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য সুর দুরন্ত থেকে ছুটে আসেন।
লাক্ষাদ্বীপ :
৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ, যার মোট আয়তন ৩২ বর্গ কিলোমিটার। লাক্ষাদ্বীপের ৩৬টির মধ্যে ১০টি দ্বীপে জনবসতি আছে, আর বাকিগুলো জনমানব শূন্য। এখানে এখনো পর্যন্ত মোট চারটি দ্বীপে পর্যটকদের থাকার বন্দোবস্ত করা গেছে। সেই দ্বীপগুলো যথাক্রমে কাদমত, কাভারাত্তি, বাঙ্গারাম এবং ঠিন্নাকারা। আগাত্তি দ্বীপ থেকে এই চারটি দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র উপায় দ্রুতগতি সম্পন্ন নৌকা। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন সারি সারি নারকেল গাছ, ঝাউ গাছ, মাঝে মাঝে কিছু ঘাস। এখানে প্রাকৃতিক আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। তাই আপনি ছুটির কটাদিন এখানে ঘুরে আসতেই পারেন।